বুদ্ধ ধর্ম বিশ্বের শান্তির ধর্ম

(জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক সর্ব প্রকার রোগ ব্যাধি উপদ্রভ থেকে মুত্তি হয়ে নির্বাণ যাবার চিত্ত উৎপত্তি হোক)

অনিত্য ধর্ম

অনিত্য ধর্ম

(১) বায়ুমুখে প্রদীপ তুল্য কম্পি এ জীবন,
পরের দেখে নিজ মৃত্যু ভাব অনুক্ষণ।
মাহাসম্পদ প্রাপ্ত জল, মরেছে এই ভবে,
তথা মোর মরণ হবে, মরিব নিশ্চিততে।
জন্মক্ষণ হতে মরণ আসিতেছে পাছে,
ঘাতকরে তুল্য যায় সুযোগ খুজিছে।
ক্ষণিকের বিশ্রামহীন গমনোম্মুখ সদা,
জীবেতের টানে মরণ উদয় অস্ত যথা।
বিজলী- চমক, জলবুদ্ বুদ্, পত্রে জল যথা,
ক্ষণভঙ্গুর জীবনে মরণ, অবারিত সদা।
অসাধারণ ঋদ্ধিধর, পুণ্যধর বুদ্ধে,
এই মরণ নিয়ে গেল এসে ক্ষিপ্রবেগে।
মরণের হাতে যদি এমনি সম্ভবে,
মাদৃশ তুচ্ছের বেলায় বলার কি আছে?
খাদ্যর অভাবে কিংবা দেহ বিকলতায়,
অথবা বাইরে থেকে কোন দুর্ঘটনায়।
যে কোন মুহুর্তে মরণ ঘনিয়ে আসিবে,
নিয়ে যাবে আমাকে চোখের পলক।
(২) সর্ব সংস্কার অনিত্য উদয়- বিলয়শীল,
উৎপত্তি নিরোধে হয় বিমুক্তি স্বাধীন।
প্রাণ- বায়ুহীন দেহ, যেই ক্ষণে হয়,
অচিরেই শায়িত হয় মাটিতে নিশ্চয়।
অশুচি ঘৃণিত হয় প্রাণহীন দেহ,
মৃতপোড়া কাষ্ঠ তুল্য পরিত্যাজ্য দেখ।
কোথা হতে অনাহুত আগত এখানে,
এখান হতে গেল চলে অনুমতি বিনে।
এলাে আর গেল চলে  নিজ ইচ্ছা মতে,
তার জন্য এত শোক, এত তাপ কিসে?
পুত্র আছে, ধন আছে এই এই বলে,
মূর্খজনে দর্প করে মরে অহংকারে।
নিজ কায়া নিজের বশে নহে কদাচন,
মরলে কভু যায় কি সাথে সেই পুত্র-ধন?
(৩) ধন- ধান্য, মাণিক্য, অর্থ- বিত্ত আর,
দাস, কর্মচারী, যত আশ্রিত আমার,
সবকিছু ফেলে রেখে চলে যেতে হবে,
শুধু যাবে কর্মফল কায- মনো- বাক্য।
তাহাই নিজের হবে, যাবে আমার সাথে,
ছায়াতুল্য হবে তাহা অনুগামী হবে।
জীবিতই মরে শুধু, মরিতেছে সবে,
পাপ- পুণ্য কর্মফল নিয়ে গমন করে।
পাপীর গমন হয় অবীচি নিরয়ে,
স্বর্গগামী সেই হয় পুণ্যকামী যে-।
(৪) কিমাকৃতি মগজে পূর্ণ শুচির মস্তকে,
অবিদ্যায় আচ্ছন্ন মূর্খই মোহিত দেহে।
দ্বিপদী এই দেহ পূর্ণ অশুচি দুর্গন্ধে,
কৃমিকৃলে পূর্ণ যথা আবর্জনা কূপে।
এতাদৃশ্ দেহটিকে, আছে কি-বা আর?
কী আছে পচা দেহে, পরকে দেখার?
আত্মপর কায়ে কর, আসক্তি বর্জন,
সর্বদেহে অশুভ সংজ্ঞা কর উৎপাদন।
(৫) মরণ সুখের নহে ভবে কদাচন,
মহাদুঃখ তাই তারে ডরে সর্বজন।
মরণের হাত ভবে এড়াবার তরে,
নানাজনে নানাধর্ম রচে ধরাপরে।
সৃজিতেছে কত জনে কতই উপায়,
তবুও মরণের হাতে কেবা রক্ষা পায়?
সম্যক সম্বুদ্ধ আদি ধর্মরাজগণ
মরণ- সাগরে সবে হৈলা নিমগণ।
(৬) আয়ুক্ষয় কর্মক্ষয় আয়ু- কর্ম ক্ষয়,
উপচ্ছে মৃত্যু হয়, মৃত্যু চতুষ্টয়।
এ চারিটি একটির নিশ্চয় ঘটিলে,
মৃত জীব বলি তারে, কহেন সকলে।
মর্ত্য লোকে আছে জীব মরণের তরে,
না মরিয়া এ জগতে থাকিতে না পাবে।
সে কারণে সদা ভাব মরণ হইবে,
মরিব মরিব আমি এ অনিত্য ভবে।
মরিয়ছে মরিবেই যত জীবগণ,
আমিও মরিব ধ্রুব সত্য সনাতন।
মৃত্যুমার ত্যাগকল্পে মৃত্যু- স্মৃতি স্মর,
দেহজাত তুষ্ণা তাতে ক্ষয়িবে সত্বর।
(৭) দুঃখ ছাড়া ভবে সুখ লেশমাত্র নাই,
দুঃখময় এ সংসার যেই দিতে চাই।
জন্মে জন্মে অতীত কালেতে জীবগণ,
কত যে ভোগিল দুঃখ কে করে গণন।
ভগবান বলেছেন,‌ ওহে শিষ্যগণ!
পূর্বে এত জন্ম আমি করিনু ধারণ।
প্রিয়ের বিরহে এত করিনু রোদন,
যদি বা রাখিত আখি নীর কোন জন।
এ জন্ম দুঃখ ভোগ করিনু সংসারে,
না আটিত সেই জল সপ্ত সাগরে।
পূর্বে পূর্বে জন্মে এত হয়েছে মরণ,
প্রত্যেক জন্মের মম মাংস কোন জন
একত্র করিয়া যদি রাখিতে পারিত
ধরা হতে মম মাংসপিণ্ড বড় হত।
প্রত্যেক জন্মের মোর অস্থি কোন জনে,
রাশীকৃত করিয়া রাখিত সযতনে।
সুমেরু হইতে তার হত বৃহত্তর,
জন্মে জন্মে হেন দুঃখ ভোগ বহুতর।
বুদ্ধাংকুর হয়ে দুঃখ ভােগিলাম এত,
অপরের দুঃখ ভোগ বলিব বা কত?
এরূপ বিবিধি দুঃখ ভোগ নিরন্তর,
বর্তমান জন্মে দুঃখ অতীত সোসর।
সাধু-------সাধু-------সাধু--------।

No comments

Powered by Blogger.