মহাসমুদ্রতুল্য বুদ্ধের ধর্ম
১.যেমন পহাবাদ, মাহসমুদ্র ক্রমশ ঢালু হয়ে যায়, শ্রমশ দূরে চলে যায়, পাহাড়ের খাড়া দিক সদৃশ কোন খাড়াভাব ছাড়া ক্রমশ একপার্শ্বে পড়ে থাকে, ঠিক তদ্রুপ, এই ধর্ম বিনয়ে আকস্মিকতা বিহীন আনুপূর্বিক শিক্ষা, আনুপূর্বিক অনুশীলন, আনুপূর্বিক প্রতিপদা আছে যেমন অন্তর্দৃষ্টির উপলব্ধি। পহাবাদ, এটা এই ধর্ম বিনয়ে প্রথম আশ্চর্য, অদ্ভুত বিষয় যা প্রত্যক্ষ করেই ভিক্ষরা এই ধর্ম বিনয়ে অভিরমিত হয়।
২. মহাসমুদ্র যেমন স্থির, এর সীমা অতিক্রম করে না, ঠিক তদ্রুপ, আমা কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত শিক্ষাপদ আমার শ্রাবকগণ (শিষ্যগণ) জীবনের বিনিময়েও লংঘন করে না। এটা দ্বিতীয় গুণ।
৩.
যেমন, পহাবাদ! মহসমুদ্রে কোন মৃতদে থাকতে পারে না, কোন মৃতদেহ পতিত হলে তা শ্রীঘ্রই তীরে স্থলভাগে স্ত্তপীকৃত হয়: তদ্রুপ! দুঃশীল, পাপধর্মী, অশুচি, সদ্ধিগ্ধ আচারসম্পন্ন গোপনে (পাপ) কর্ম সম্পাদনকারী, আশ্রমণ হয়ে শ্রমণের দাবীকারী আব্রাহ্মণের প্রতিজ্ঞাকারী, হাড়ে হাড়ে পচা, কমুক এবং অধম, সংঘ মধ্যে এ ধরনের পুদ্ গল ( সত্ত্ব) মিলিত হয় না, কিন্তু অতি শ্রীঘ্রই একত্রিত হয়ে তাকে বহিষ্কার করে দেয়। যদিও সে একত্রিত সংঘের মধ্যে উপবিষ্ট থাকে তথাপি সে সংঘ হতে বহু দূরে এবং সংঘ তা হতে বহু দূরে। এ্টাই এই ধর্মে তৃতীয় গুণ।
৪. যেমন, পহাবাদ, যে সকল মহানদী আছে, যেমন : গঙ্গা, যমুনা, অচিরবতী, সরভূ, মহী তৎ সমুদয় মহাসমুদ্রে পতিত হয়ে পূর্ব নাম, গোত্র হারিয়ে ফেলে এবং শুধুমাত্র মহাসমুদ্র হিসেবেই বিবেচিত হয়: তদ্রুপ এ ধর্মে ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, শূদ্র তথাগত প্রবেদিত ধর্ম বিনয়ে আগার হতে অনাগারিক প্রব্রজ্যা লাভ করত তাদের পূর্ব নাম, গোত্র পরিহার করে শুধুমাত্র শাক্য পুত্রীয় শ্রবণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটা এই ধর্মে চতুর্থ গুণ।
৫. যেমন, পহাবাদ,যদিও জগতের সকল ক্ষুদ্র নদী মহাসমুদ্রে পতিত হয় এবং অন্তরীক্ষে যে বারিধারা বর্ষিত হয় তৎদ্বারা মহাসমুদ্রের শূন্যতা ও পূর্ণতার কোন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না: তদ্রুপ, বহু সংখ্যক ভিক্ষু অনুপাদিশেষ নির্বাণ ধাতুতে পরিনির্বাপিত হয়, নির্বাণ ধাতুর শূন্যতা বা পূর্ণতার উপর কো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। ইহা এই বিনয়ে পঞ্চম অদ্ভুদ গুণ।
৬. যেমন পহাবাদ! মহাসমুদ্রের এ রস লবণ রস: তদ্রুপ, এই ধর্ম বিনয়ে এক রস বিমুক্তি রস। ইহা ষষ্ঠ অদ্ভুদ গুণ।
৭। যেমন পাহাবাদ! মহাসমুদ্র নানাবিধ মূূল্যবান সম্পদের সঞ্চয়াগার, তথায় এসব সম্পদ বিদ্যমান: মুক্তা, মনি উজ্জ্বল নীল বর্ণের প্রস্তর, প্রবাল, রৌপ্য ইত্যাদি, তদ্রুপ, এই ধর্ম বিনয়ে আছে অনেক নানবিধ রত্ন চার স্মৃতি প্রস্থান, চার সম্যক প্রধান, চার ঋুদ্ধিপাদ, পঞ্চ ইন্দ্রিয়, পঞ্চ বল, সপ্ত বোধ্যঙ্গ ও আর্য আষ্টাঙ্গিক মার্গ। ইহা সপ্তম আশ্চর্যজনক অদ্ভুদ গুণ।
৮। যেমন পাহাবাদ! মহাসমুদ্র বিশাল বিশাল প্রাণীদের আবাসস্থল। তথায় বাস করে তিমি, তিমিঙ্গল,অসুর,নাগ, গন্ধর্ব: মহাসমুদ্রে আছে শত যোজন, দ্বিশত যোজন, ত্রিশত, চতুর্শত, পঞ্চশত যোজন দীর্ঘ জীব: তদ্রপ পহাবাদ! এই ধর্ম বিনয়ে মহৎ সত্ত্বদের আবাস, তথায় আছে এসব ভূত স্রোতাপন্ন এবং স্রোতাপত্তি ফল প্রত্যক্ষ ক্রিয়ায় প্রতিপন্ন: সকৃদাগামী এবং সকৃদাগামী ফল প্রত্যক্ষ ত্রিয়ায় প্রতিপন্ন, অনাগামী এবং অনাগামী ফল প্রত্যক্ষ ক্রিয়ায় প্রতিপন্ন,অরহৎ এবং অর্হত্বে প্রতিপন্ন" পহাবাদ এটাই ধর্ম বিনয়ের অষ্টম আশ্চর্যজনক অদ্ভুদ ধর্ম যা প্রত্যক্ষ করে করেই ভিক্ষুগণ এই ধর্ম বিনয়ে অভিধমিত হয়।
No comments